ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে মতবিনিময়ে ১৩টি প্রস্তাব তুলে ধরেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বৈঠক শেষে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা হবে।
১. নতুন সংবিধান: বিদ্যমান সংবিধান নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে এবং বিগত সরকারের সময় সংবিধানে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই বর্তমান সংবিধান বাতিল করে একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠন করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করা এবং গণভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন করতে হবে।
২. গণহত্যার বিচার: জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যার বিচার গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে করতে হবে। একইভাবে, গত ১৬ বছরে সংগঠিত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. দুর্নীতি ও অর্থ পাচার: বিগত বছরের দুর্নীতিবাজদের এবং বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে এবং দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৪. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন: আইন, সংবিধান, এবং শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করা সব প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৫. ভুয়া নির্বাচন: ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের পরিচালনাকারী কমিশন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
৬. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন: বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৭. প্রতিষ্ঠান সংস্কার: নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ প্রদান করতে হবে।
৮. শিক্ষা খাতের উন্নয়ন: বিগত ১৬ বছরে শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯. নিয়োগ ও বদলি পর্যালোচনা: ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢালাওভাবে হওয়া নিয়োগ, বদলি ও অব্যাহতির বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
১০. মিথ্যা মামলা: হয়রানীমূলক এবং মিথ্যা মামলা করা যাবে না। যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা হয়ে থাকে, তা প্রত্যাহার করতে হবে।
১১. ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন: দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগণের চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
১২. চাঁদাবাজি ও দখলদারি: চাঁদাবাজি, দখলদারি ও হয়রানী কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
১৩. অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের দমন: নব্য চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের দমন করতে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করতে হবে।
0 Comments