“আমি জানতাম যে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। এটাও জানতাম যে শিক্ষার্থীরা আমার অফিস ঘেরাও করবে এবং তারা আমাকে খোঁজাখুঁজি করছে। ফলে আমি পদত্যাগপত্র সাইন করে অফিসে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু তারা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা চাচ্ছিলো আমি যেন তাদের সামনে গিয়ে পদত্যাগ করি।”
''বিবিসি বাংলা''কে কথাগুলো বলছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি নিজ দায়িত্বে পদত্যাগ করেছেন, তবে নিরাপত্তার কারণে এবং 'আবারও হয়রানির ভয়ে' নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
ঐ শিক্ষক জানাচ্ছেন যে তিনি ছাত্রদের দ্বারা 'অপমানিত হওয়া' ঠেকাতে বিভাগের অফিসে যাওয়ার সাহস করেননি। যদিও শিক্ষার্থীরা তাকে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল, তিনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিলেন।
“আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তারা ভিডিও করবে এবং সেখানে গেলে যে কোনো একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি যেতে রাজি হইনি,” কিন্তু বিভাগে না গেলেও ঐ শিক্ষক খোঁজ পান যে ছাত্ররা ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাসভবনের দিকে আসছে -বলছিলেন ঐ শিক্ষক।
“এটা ছিলো ভীতিকর। শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে আমার বাসার দিকে আসতে শুরু করে। আমি এবং আমার পরিবার খুবই ভয় পেয়ে যাই। পুরো ভবনেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখন পরিবারসহ আমার বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যেতে বাধ্য হই।”
নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ শিক্ষক জানান, তিনি আওয়ামী লীগ পন্থী নীল দলের সদস্য এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেননি। এসব অভিযোগে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
“আমি আমার পদত্যাগ মেনে নিয়েছি। তারা আমার অফিস পর্যন্ত গিয়েছে এতে সমস্যা নাই। কিন্তু আমার বাসায় কেন আসবে? আমার পরিবার কেন টার্গেট হবে?” প্রশ্ন করেন তিনি।
বাংলাদেশে গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক পদগুলোতে থাকা শিক্ষকদের পদত্যাগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিসি ও প্রো-ভিসি সহ বিভিন্ন পদে থাকা শিক্ষকেরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এমন খবর আসতে শুরু করে যে, কিছু শিক্ষক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।
শিক্ষকদের ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করা, অপমান-অপদস্থ করা, এবং এমনকি তাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে, শিক্ষকদের চাকরি ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, বিশেষ করে যারা সরকারের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছেন অথবা আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে।
ছাত্রদের আন্দোলন ও প্রতিবাদ কার্যক্রমে শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। এর ফলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ও বিরূপ হয়ে উঠছে।
0 Comments